রাজনগর উপজেলা
রাজনগর বাংলাদেশের মৌলভীবাজার জেলারর
অন্তর্গত একটি উপজেলা ।
এর আয়তনঃ ৪১৮ স্কোয়ার কিঃ মিঃ
রাজনগরের মোট জনসংখ্যা ১৮৯৫৮৭জন। এর মধ্যে পুরুষ ৯৭,৩৩৯ জনএবং মহিলা
৯২,২৪৮ জন । রাজনগরে শিক্ষার হার ২৭.২%। নারী শিক্ষার হার ২২.৬%।
রাজনগর উপজেলার ঐতিহ্য
রাজনগরের ইতিহাস ও ঐতিহ্য সর্ম্পকে প্রাচীনকালের তাম্রলিপিতে কিছু তথ্য পাওয়া যায় বলে
চেয়ে রাজনগর ছিল অনেক অগ্রসর ও উন্নত সংস্কৃতিতে সমৃদ্ধ। অনেক কৃতি সন্তানের জন্ম এই
রাজনগরে। সিলেট অঞ্চলের প্রথম দৈনিক পত্রিকা ‘বলাকা’র সম্পাদক শ্রী কালীপ্রসন্ন সিংহের
বাড়ি রাজনগরে।আরেক প্রখ্যাত সাংবাদিক- শ্রী গৌরিশঙ্কর ভট্টাচার্যের বাড়ি রাজনগরের পাঁচগায়ে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম ছাত্রী শ্রীমতি লীলা নাগের বাড়ি রাজনগর উপজেলায়।বৃটিশ বিরোধী
আন্দেলনে তিনি ১০ বছরের বেশী সময় জেল খেটেছেন। লীলা নাগ 'জয়শ্রী' নামে মহিলাদের জন্য
একটি পত্রিকাও প্রকাশ করেছিলেন।১৯৩২সালে পাঁচগায়ে কাঁর মায়ের নামে 'কুঞ্জলতা প্রাথমিক
বিদ্যালয়' চালু করেন।
প্রাচীনকাল থেকে পাঁচগাও এলাকা ছিল জাহাজ ও যুদ্বাস্ত্র নির্মাণের জন্য বিখ্যাত।সতের শতকে
রাজনগরের 'জনার্দ্ধন কর্মকারের' খ্যাতি ছিল উপমহাদেশব্যাপি।তিনি ঢাকার কালে জমজম
(সদরঘাটের কামান বলে খ্যাত) ও বিবি মরিয়ম নামে কামান দুটি তৈরী করেন।মুর্শিদাবাদের
জাহানকোষা তোপও তাঁর নির্মাণ।এক সময়ে সিলেট অঞ্চলের লৌহ শিল্প নিয়ন্ত্রন করতেন রাজনগরের
শিলাপীরা।
ঐতিহাসিকেরা ধারণা করেন সিলেটি নাগরী সাহিত্যের প্রাণকেন্দ্র ছিল এই রাজনগর।মহাকবি
শাহ শেখ চান্দ এবং মধ্যযুগের খ্যাতনামা কবি সৈয়দ শাহনুরের জন্ম রাজনগরে।নাগরী সাহিত্যের
প্রাণপুরুষ সৈয়দ সাদেক আলীর মাজার রয়েছে মনসুরনগরের তাহারলামু গ্রামে।
সিলেট শহরের ক্বিনব্রিজের নীচে যে ঐতিহাসিক‘সারদা হল’ আছে তার সাথে রাজনগরের এক
মহান ব্যাক্তির স্মৃতি জরিত। ‘শ্রী সারদা চরণ শ্যাম ‘রাজনগর উপজেলার উত্তরভাগ গ্রামের
লোক ছিলেন।প্রথম সিলেটি হিসাবে ১৮৯৬ সালে তিনি 'ইন্দেশ্বর টি এন্ড ট্রেডিং কোম্পানির'
মাধ্যেমে বাঙালীদের মধ্য থেকে চা চাষের উদ্যোগ নেন।
উপজেলার ভৌগলিক পরিচিতি
রাজনগর উপজেলা মৌলভীবাজার জেলার ৭টি উপজেলার একটি।উপজেলার উত্তরে সিলেট
জেলার বালাগঞ্জ ও ফেঞ্চুগঞ্জ উপজেলা; পূর্বে মৌলভীবাজার জেলার কুলাউড়া উপজেলা; দক্ষিণে
মৌলভীবাজার জেলার সদর ও কমলগঞ্জ উপজেলা;পশ্চিমে মৌলভীবাজার জেলার সদর
উপজেলা। উপজেলার মোট আযতন-৩৪৯.৬৩ বর্গ কি.মি.।ভূপ্রাকৃতিক ভাবে নিম্ন এলাকা ও
টিলা শ্রেণীর ভূমি দ্বারা গঠিত। উপজেলার উত্তর-পশ্চিম অংশ ও দক্ষিণ-পশ্চিম অংশ নীচু
এলাকা।নীচু এলাকার জমির পরিমাণ-৯৬৫১ হেক্টর,মাঝারী নীচু এলাকার ভূমির পরিমাণ
-৪৮৯৫ হেক্টর। নীচু এলাকায় হাওর কাওয়া দীঘি অবস্থিত।ফতেহপুর,পাচঁগাও,কামারচাক
ইউনিয়নের বেশীর ভাগ ভূমি এই নীচু অঞ্চলে পড়েছে।বর্ষাকালে অধিকাংশ এলাকা জলমগ্ন
থাকে।এই নীচু এলাকায় উপজেলার বোরো আবাদের ক্ষেত্র। উপজেলার উত্তর-পূর্ব ও দক্ষিণ-পূর্ব
অংশ পাহাড়ী এলাকা।ছোট ছোট টিলার সমন্বয়ে এ এলাকাটি গঠিত।এলাকাতেই উপজেলার
সকল চা বাগান অবস্থিত। উচু জমির পরিমাণ-৭৭৫৪ হেক্টর ও মাঝারী উচু জমির পরিমাণ
-৯৫৪৩ হেক্টর।উপজেলার উত্তর-পশ্চিম প্রান্ত দিয়ে কুশিয়ারা নদী ও দক্ষিণ প্রান্ত দিয়ে মনু
নদী প্রবাহিত হচ্ছে।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন